:: হেলাল হোসেন কবির :: কবি সরোজ দেব ভালো নেই। খবরটা শুনার পর বুকের ভিতর মোছড় দিয়ে উঠে। কবিকে দেখতে গত ১৪ জানুয়ারি ছুটে যাই গাইবান্ধা শহরে। প্রথমে পূর্ব পাড়া তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখি গেটে তালা ঝুঁলছে। তারপর খোঁজ নিয়ে জানলাম কবি সেখানকার একটি ক্লিনিকে রয়েছেন। তরুণ কবি সাইফুল আকন্দের সাথে যোগাযোগ করে পৌঁছালাম কবির কাছে।
ঐশি ক্লিনিকের ২য় তলার একটি রুমে চিকিৎসা চলছে। কবি আমাকে দেখা মাত্রই অবুঝ শিশুর মতো হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো। এক পর্যায়ে বলে উঠে “খুব যন্ত্রণারে ভাই গতকাল রাতে মরে গেছিলাম প্রায়, যাক তুই এলি মনে শান্তি পেলাম”। কবির অবস্থা দেখে নিজেকে সামাল দেওয়া দায় হয়েছে। কিভাবে ধূকে ধূকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে মানুষটি, তা দেখে নিজের চোখের দৃষ্টিতে পলক ফিরাতে পারছি না। বেডে শুয়ে আছেন কবি, তার পাশে বসে কিছুক্ষণ গল্প। এর মাঝেই নিজেকে শান্তনা দেওয়া চেষ্টা। পাশে ছিলেন গাইবান্ধা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক প্রমতোষ সাহা। তিনি বলেন, ‘কবি জীবন আর মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। জানতে চাইলেন আমি কোত্থেকে এসেছি, কবি নিজেই আমার বিষয় দুটি কথা বললেন ওনাকে। রুমের কোনায় বসা কবির পুত্রবধূ। কেউ একজন কবিকে ফল খাওয়াতে এগিয়ে আসলেন। তিনি খাওয়া প্রতি অনহীয়া দেখালেন। সমাজ সেবা অফিসের লোক আসলেন কবির ভোটার আইডি নিতে।
সম্প্রতি মূত্রথলি থেকে টিউমার অপসারণের পর তাঁর ক্যান্সার আক্রান্তের বিষয়টি ধরা পড়ে। মহান ‘৭১ এ দেশের জন্য যুদ্ধ করেও স্বীকৃতির আশা করেননি।পরিবারকে সময় না দিলেও সারাজীবন তরুণদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা সরোজ দেব হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
কবি এখন ক্যান্সারের কাছে বন্ধি হয়ে আছেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে রংপুরে নিয়ে গিয়ে কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে। এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল। অনুরাগীদের চেষ্টায় চলছে চিকিৎসা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে সহায়তা দিচ্ছেন।
সারা জীবন কবিতায় মেতে থাকা মানুষটির জীবন দারিদ্র্যক্লিষ্ট। কাছের শুভাকাঙ্ক্ষীরা জানান প্রাণপণ চেষ্টা করছি তাঁকে আবারও আমাদের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে। ফোক শিল্পী জিয়া জানান, গাইবান্ধায় তার হাত ধরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদানের পূর্ণতা ফিরে পায়। মানুষটাকে দেখলে এখন খুব কষ্ট হচ্ছে।
কবি এ্যাড. কাসেম ইয়াসবীর জানান, কবি সরোজ দেব এমন একজন গুণীমানুষ যার জনপ্রিয়তা বাংলাদেশ ছড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গে, চেষ্টা চলছে নিজেদের সাধ্যমত কিছু করার, সকলেই এগিয়ে আসলে কবি হয়তো আবার প্রাণভরে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিচরণ করবে।
জীবন মরণ ক্ষণিকের মাঝে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুয়ে আছেন কবি, অথচ বিদায় বেলা “সরোজ দেব রচনাবলি প্রথম খণ্ড” বইটি আমার হাতে তুলে দিয়ে দেশ বাসীর কাছে দোয়া চান।
জানা যায়, বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষীসহ শিল্পকলা একাডেমি মহাপরিচালক ৫০হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। সেই সাথে জেলা প্রশাসক নাহিদ রসুল নার্সিং হোমে এসে দেখা করে ৫০হাজার টাকা দিয়েছেন এবং প্রতি মাসে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ক্যান্সারের কাছে বন্ধি হয়ে জীবনের দাঁড়প্রান্তে থাকার পরেও সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি কবি সরোজ দেব আমাদের মাঝে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক, ভালো থাকুক।